দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা নোটস।

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা নোটস।
WBBSE Class 10 Physical Science Concern About Our Environment Notes.


    Copyright free image source: https://pixabay.com/

"আজ আমরা WBBSE দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যায় পরিবেশের জন্য ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি মাধ্যমিকের সকল ছাত্র ছাত্রীদের খুবই কাজে আসবে।"

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা নোটস Download

   দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা নোটস

বায়ুমণ্ডলঃ  অভিকর্ষ বলের প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উপরে যে অদৃশ্য গ্যাসীয় আবরণ পৃথিবী কে ঘিরে আছে তাকে বায়ুমণ্ডল বলে।

যদিও বায়ুমণ্ডলের নির্দিষ্ট সীমা নেই সাধারণত ভূপৃষ্ঠের 750 km থেকে 1000 km পর্যন্ত বায়ুর অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।

বায়ুমণ্ডলের উপাদানঃ বায়ুমণ্ডল যে যে উপাদান দ্বারা গঠিত হয় তা হল- 

1.গ্যাসীয় উপাদানঃ বায়ুর গ্যাসীয় উপাদান গুলির মধ্যে রয়েছে N2 (78.09%), O(20.95%). CO2 (0.03%), Ar (0.93%) । এছাড়াও বায়ুতে খুব সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায় হিলিয়াম,নিয়ন,  মিথেন, জেনন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি গ্যাসI 

  2.জলীয়বাষ্প এবং

 3. ধূলিকণা  

 বায়ুমণ্ডলের গঠন (Structure of atmosphere) :  বায়ুস্তর  গুলির বিন্যাস দুইভাবে করা যেতে পারে –

1)     রাসায়নিক গঠন অনুসারে এবং

2)     উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে 

 

1) রাসায়নিক গঠন অনুসারে:

রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডল কে দুইটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা --

a) হোমোস্ফিয়ার বা সমমন্ডল    এবং

b) হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমন্ডল

 

a) হোমোস্ফিয়ার বা সমমন্ডলভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 90 km উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের উপাদান গুলির অনুপাত অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ রাসায়নিক গঠন একই থাকে বলে স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয়।

b) হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমন্ডল : 
হোমোস্ফিয়াররের উপর থেকে অর্থাৎ 90 km থেকে 10000 km উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের যে সব রাসায়নিক উপাদান নিয়ে গঠিত তাদের অনুপাত একই রকম থাকে না বলে এই স্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয়।

2) উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে :

উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডল কে মোটামুটি ছয়টি স্তরে ভাগ করা হয় যেমন - 

  a) ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere)

  b) স্ট্রাটোস্ফিয়ার (Stratosphere)

 c) মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)              

 d) থার্মোস্ফিয়ার (Thermosphere)                             

 e) এক্সোস্ফিয়ার (Exosphere)                      

 f)  ম্যাগনেটোস্ফিয়ার (Magnetosphere)

a) ট্রপোস্ফিয়ার বা ঘনমন্ডল :

ভূপৃষ্ঠ থেকে 16 থেকে 18 km পর্যন্ত বিস্তত সবচেয়ে ভারী ঘন বায়ুস্তর থাকে ট্রপোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরেই আমরা বাস করি।

বৈশিষ্ট্য :

1) উষ্ণতা: 15°C থেকে (-)55°C                                  

2) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে এই স্তরের চাপ উষ্ণতা উভয়ই কমে।

3) প্রতি 1 কিমি উচ্চতা বৃদ্ধিতে তাপমাত্রা প্রায় 6.5°C হ্রাস পায়

4) এই স্তরে ঝড়, বজ্রপাত, বৃষ্টি সংঘটিত হয় বলে এই অঞ্চলকে ক্ষুব্ধ মন্ডল বা পরিবর্তনশীল স্তর বলে।

5) ওজন হিসেবে বায়ুমণ্ডলের প্রায় 75 % বায়ু এই স্তরে থাকে।

6) এই স্তরে ধূলিকণা থাকায় আকাশ নীল দেখায়

7) এই স্তরের ওপরের সীমাস্থ অঞ্চলকে ট্রপোপজ (Tropopause) বলে।

8)  ট্রপোপজে উষ্ণতা মোটামুটি (-)55°C

9)  ট্রপোপজ এর উচ্চতা পৃথিবীর বিষুবরেখায় 15-16 km এবং উত্তর দক্ষিণ মেরুতে 5 - 6 km। এই অঞ্চলের উচ্চতা গ্রীষ্মকালে বাড়ে এবং শীতকালে কমে ।

b) স্ট্রাটোস্ফিয়ারঃ

 ট্রপোপজ এর ওপর থেকে প্রায় 50 km উচ্চতা পর্যন্ত অর্থাৎ 18 km থেকে 50 km পর্যন্ত বিস্তৃত যে বায়ুর স্তর আছে যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়তে থাকে তাকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে ।

বৈশিষ্ট্য :

1) উষ্ণতা: -55°C থেকে 0°C    

 2) এই স্তরে ধূলিকণা জলীয়বাষ্প থাকে না, কুয়াশা মেঘ সৃষ্টি হয় না, ঝড় বৃষ্টি হয় না, তাই এই স্তর কে শান্তমন্ডল বলে।

3) এই কারণে এই স্তরে জেট বিমান গুলি সহজে চলাচল করে।

4)স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর উর্ধ্বসীমা কে স্ট্রেটোপজ (Stratopause) বলে। এখানে বায়ুর উষ্ণতা 0°C বা 32°F

5)  এই স্তরে বায়ুর চাপ সমুদ্র পৃষ্ঠের বায়ুর চাপের 1/1000 অংশ হয় ।      

ওজোনোস্ফিয়ার (Ozonosphere) :

স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তরের উপরের দিকে 25 থেকে 50 কিমি পর্যন্ত ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব বেশি থাকায় ওই অংশকে ওজোন স্তর বা ওজনোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে। এর ফলে অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছাতে পারে না অতিবেগুনি রশ্মি জীবজগতের পক্ষে খুব ক্ষতিকারক অর্থাৎ ওজোন স্তর ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে পৃথিবী কে রক্ষা করে। সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি রশ্মি এই স্তরে শোষিত হয় বলে এর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় এই স্তরের উষ্ণতা প্রায় 76°C

Concern-About-Our-Environment-Notes
Concern-About-Our-Environment-Notes


c) মেসোস্ফিয়ারঃ

স্ট্রেটোপজের উপর থেকে প্রায় 80 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে বায়ু স্তর আছে যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতা কমতে থাকে তাকে মেসোস্ফিয়ার বলে

বৈশিষ্ট্য :

1) উষ্ণতা    0°C থেকে (-)93°C   

2)এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা চাপ উভয়ই কমে এবং এবং উষ্ণতার সর্বনিম্ন মান হয়  (-) 93°C। এটি বায়ুমন্ডলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা 

3) মহাকাশ থেকে আগত ছোট ছোট উল্কাপিণ্ড এখানেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।     

4) মেসোস্ফিয়ার এর ঊর্ধ্বসীমাকে মেসোপজ (Mesopause) বলে।

d) থার্মোস্ফিয়ার বা আয়নোস্ফিয়ারঃ

বায়ুমণ্ডলের মেসোপজ এর উপর থেকে প্রায় 500 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে বায়ুর স্তর আছে যেখানে উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে উষ্ণতা দ্রুত হারে বাড়তে থাকে তাকে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য :

1) উষ্ণতা  (-)93°C থেকে প্রায় 1200°C

2) আয়নমন্ডল সূর্য থেকে আসা এক্স রশ্মি গামা রশ্মি শোষণ করে তাই এই স্তরের উষ্ণতা খুব বেশি হয় এই স্তরের গড় উষ্ণতা প্রায় 1200°C

3) মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে এই স্তরের নিচের অংশের বায়ু আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে একে আয়নোস্ফিয়ার বলে।

4) এই স্তরে অবস্থিত আয়নমন্ডল এর জন্যই পৃথিবীতে বেতার যোগাযোগ সম্ভব হয়।

5) মেরু প্রদেশ একটানা 6 মাস যখন রাত থাকে তখন ওই অঞ্চলের আয়োনোস্ফিয়ারে মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি দেখা যায়।

6) আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের (International Space Station - ISS) কক্ষ পথটি এই স্তরে অবস্থিত।

7) এখানে বাতাস প্রায় নেই বললেই চলে তাই আকাশ কালো দেখায়।

Concern-About-Our-Environment-Notes
মেরুপ্রভা বা মেরুজ্যোতি


e) এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমণ্ডলঃ 

থার্মোস্ফিয়ার এর উপর থেকে প্রায় 1600 km পর্যন্ত অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠ থেকে 500 km থেকে 1600 km উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত যে বায়ু স্তর আছে যেখানে বায়ুর ঘনত্ব খুব কম তাকে এক্সোস্ফিয়ার বা বহিঃমন্ডল বলা হয়।

বৈশিষ্ট্য :

1) উষ্ণতা 1200°C থেকে 1600°C

2) কৃত্রিম উপগ্রহ , মহাকাশ স্টেশন এই স্তরে অবস্থিত

3) থার্মোস্ফিয়ার এক্সোস্ফিয়ারের সংযোগকারী স্তর হল থার্মোপজ (Thermopause)     

f) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বা চৌম্বকমণ্ডলঃ

এক্সোস্ফিয়ার   ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের শেষ সীমা (10000 kmপর্যন্ত বিস্তৃত স্তরটিকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলে।

উষ্ণতাঃ 1600°C এর থেকে বেশি।

 

উচ্চতা ভেদে উষ্ণতা চাপের তারতম্যঃ

ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 50 কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটার উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে উষ্ণতা প্রায় 6.5°C কমে।

ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানের কোন বিন্দুর চারিদিকে একক ক্ষেত্রফলের উপর বায়ু লম্বভাবে যে বল প্রয়োগ করে তাকে ওই বিন্দুতে বায়ুমন্ডলের চাপ বলে। 

বায়ুমণ্ডলের চাপ মাপা হয় ব্যারোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুর চাপ তত কমতে থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি 1 km উচ্চতা উপরে উঠলে বাতাসের চাপ প্রায় 8.5 সেমি কমতে থাকে।

 

ওজোন স্তর সৃষ্টি ও ধ্বংসের কারনঃ

বায়ুমণ্ডলের স্ট্রাটোস্ফিয়ার এর ওপরের অংশে 25 থেকে 50 km এর মধ্যে ওজোন স্তর থাকে। বায়ুমণ্ডলের প্রায় 90 % ওজোন গ্যাস এই স্তরে জমা থাকে।

ওজোন স্তর সৃষ্টির প্রক্রিয়া:

সূর্য থেকে বিকিরিত অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমন্ডলে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে উপস্থিত অক্সিজেন অনু কে ভেঙে অক্সিজেন পরমানুতে পরিণত করে।

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়
অতিবেগুনি রশ্মি প্রভাবে অক্সিজেন অনুর বিয়োজন

 

এইভাবে ভাবে উৎপন্ন অক্সিজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন অনুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অনু উৎপন্ন করে।    

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা নোটস
অক্সিজেন পরমাণু অক্সিজেন অনুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন অনু উৎপত্তি
                                                              

ওজন গহ্বর সৃষ্টি:

ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জো ফোরম্যান (1982 সালে) সর্ব প্রথম লক্ষ্য করেন আন্টার্টিকা অঞ্চলের উপরিভাগে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের অন্তর্গত ওজোন স্তরটি ক্রমশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে এই ঘটনাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় বা ওজন ছিদ্র বা ওজন গহ্বর সৃষ্টি বলা হয়।

ওজন স্তরের ধ্বংসঃ

1) CFC যৌগসমূহের ভূমিকা:

অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC বিজারিত হয় যে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে তা ওজোনকে অক্সিজেন পরিণত করে।

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়
CFC দ্বারা ওজোন অনুর বিয়োজন

 

এই প্রক্রিয়াটি অবিরাম চলতে থাকে I একটি সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু লক্ষাধিক ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে সক্ষম।

2) নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহের ভূমিকা:

স্ট্রাটোস্ফিয়ার বায়ুর ঘনত্ব কম থাকায় জেট বিমান গুলি এই স্তরের মধ্যে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম বাধায় যাতায়াত করে। এদের বজ্র গ্যাসে প্রচুর নাইট্রিক অক্সাইড নিক্ষিপ্ত হয় যা ওজোনকে বিয়োজিত করে।

দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান প্রথম অধ্যায়

ওজন স্তরের ধ্বংসে নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহের ভূমিকা

ওজোন স্তর ধ্বংসের ক্ষতিকর প্রভাব:

মানুষের উপর প্রভাব

1) চামড়ার ক্যান্সার  হতে পারে। 

2) অতিবেগুনি রশ্মি মানবদেহের DNA -এর মিউটেশন ঘটাতে পারে  

3) ত্বক তামাটে বর্ণ ধারণ করে বা পুড়ে যায়  

4) প্রজনন ক্ষমতা ও অনাক্রম্যতা বা ইমিউনিটি হ্রা পায়  

5) চোখে ছানি পড়ে ও দৃষ্টিশক্তি কমে যায়।

উদ্ভিদের উপর প্রভাব:

1) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে ফলে শস্যের উৎপাদন কমে যাবে  

2) পাতা বিবর্ণ হয়ে যাবে 

3) বীজের অঙ্কুরোদগম প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হবে।

বারিমন্ডলের ওপর প্রভাব:

সামুদ্রিক প্লাংকটন এর এবং প্লাংকটন  ভোজী প্রাণীদের বিনাশ ঘটতে পারে।

জলবায়ুর উপর প্রভাবঃ

1) UV রশ্মি সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আপতিত হলে ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে এবং মেরু অঞ্চলে বরফ গলার ফলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। 

2) জলাশয় এর জল দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যাবে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটবে।  

3) অ্যাসিড বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে।

গ্রিনহাউস প্রভাব বিশ্ব উষ্ণায়ন

Concern-About-Our-Environment-Notes
Concern-About-Our-Environment-Notes


গ্রিনহাউস কি?

গ্রীন হাউস হল কাচের দেওয়াল ছাদযুক্ত এক বিশেষ ধরনের ঘর যার ভেতরে শীতপ্রধান দেশে কম উষ্ণতাসবজি ফল চাষ করা হয়। দিনের বেলা সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক তরঙ্গ খুব সহজেই কাচ ভেদ করে ওই ঘরে প্রবেশ করে এবং সবজি গাছের চারা প্রতিফলিত হয়। দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট প্রতিফলিত রশ্মি পুনরায় কাচ ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে না ফলে ঘরের অভ্যন্তরে সর্বদা উষ্ণ থাকে।

গ্রিনহাউস এফেক্ট

পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), জলীয়বাষ্প (H2O), মিথেন (CH4), CFC প্রভৃতি গ্যাস গ্রিন হাউজ এর কাজের মতো কাজ করে। এই গ্যাস গুলি সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রশ্মিকে পৃথিবীপৃষ্ঠে আপতিত হতে দেয় কিন্তু উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ দ্বারা বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট অবলোহিত রশ্মিকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয় ফলে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই ঘটনাকে গ্রীন হাউস এফেক্ট  বলা হয় এবং ওই গ্যাস গুলি কে গ্রীন হাউজ গ্যাস বলা হয়।

গ্রিনহাউস গ্যাস সমূহ

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2)

মিথেন (CH4)

ক্লোরোফ্লওরোকার্বন (CFC )

ওজোন (O3)      

নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)

জলীয় বাষ্প (H2O) ইত্যাদি।

বায়ুমন্ডলে থাকা অক্সিজেন (O2) এবং নাইট্রোজেন (N2) গ্রিনহাউস গ্যাস নয়

জৈব গ্রিনহাউস গ্যাসঃ   মিথেন (CH4)

গ্রিনহাউস এফেক্ট সৃষ্টিতে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), ক্লোরোফ্লওরোকার্বন (CFC), ওজোন (O3), নাইট্রাস অক্সাইড (NO2), ও জলীয় বাষ্প (H2O) এর অবদান যথাক্রমে 50 %, 19 %, 16 %, 8 %, 5 % ও 2 % । 

কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2 ) এর তুলনায় মিথেন (CH4 ) , নাইট্রাস অক্সাইড (NO2) এবং CFC এর গ্রিনহাউস এফেক্ট  যথাক্রমে 25,250 ও 20,000 গুণ বেশি।

Concern-About-Our-Environment-Notes
Concern-About-Our-Environment-Notes

বিশ্ব উষ্ণায়ন: বায়ুমন্ডলে গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিকারী গ্যাস গুলির পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে গ্রীন হাউজ প্রভাব বেড়ে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) বা বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতিবছর প্রায় 0.05°C করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের সম্ভাব্য প্রভাব: 

1) সমুদ্র জলের পরিবর্তন: মেরু অঞ্চলের প্রচুর বরফ গলবে এর ফলে সমুদ্রের জলের উচ্চতা বাড়বে এবং সমুদ্র স্থলভূমি সমুদ্রগর্ভে চলে যাবে।

2) আবহাওয়ার পরিবর্তন: প্রবল বন্যা,খরা, ঝড়ঝঞ্ঝা ইত্যাদি হবে। 

3) জনসাস্থঃ আবহাওয়া পরিবর্তন জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। পৃথিবী উষ্ণ হওয়ায় বিভিন্ন প্রকার মশক বাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

4) উচ্চ উষ্ণতা সহ্য না করতে পেরে বহু পতঙ্গ ও পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে ফলে ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

5) এই শতাব্দীর মাঝামাঝি পৃথিবীর উষ্ণতা 2-4°C এর মত বৃদ্ধি পাবে এবং চরম প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে ।

গ্রিনহাউস  গ্যাস নির্গমন হ্রাস কার্যকরী উপায় 

1) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ধীরে ধীরে কমিয়ে বিকল্প শক্তি ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।

2) জীবাশ্ম জ্বালানি দ্বারা চালিত যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে তার পরিবর্তে সৌর বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে হবে।

3) বনভূমি ধ্বংস না করে আরো নতুন বনভূমি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে। 

4) CFC গ্যাসের উৎপাদন এবং ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। 

5) বিভিন্ন জৈব বর্জ্য পদার্থ কে জৈব সার এ রূপান্তরিত করে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। 

6) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং মানুষকে বিশ্ব উষ্ণায়ন এর কুফল সম্বন্ধে সচেতন করতে হবে।

গ্রিনহাউস  প্রভাবের উপযোগিতা 

গ্রিনহাউস  গ্যাস গুলি না থাকলে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আসা তাপের সম্পূর্ণ অংশ আবার মহাশূন্য ফিরে যেত। এর ফলে পৃথিবী এমন শীতল হয়ে যেত যে তাতে কোন জীবের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না । গ্রীন হাউস এফেক্ট আছে বলেই পৃথিবীতে জীবের অস্তিত্ব বজায় আছে।

শক্তির যথাযথ ব্যবহার

শক্তি উৎস কে আমরা মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করতে পারি-

1) অপুঃনবীকরণযোগ্য বা প্রচলিত শক্তির উৎস 
 
যেমন জীবাশ্ম জ্বালানি, কয়লা, পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং নিউক্লিয় জ্বালানি (ইউরেনিয়াম)।
 
2) পুনঃনবীকরণযোগ্য বা অপ্রচলিত শক্তির উৎস 
 
যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জল প্রবাহের শক্তি, জোয়ার ভাটা শক্তি, ভূতাপ শক্তি, জৈবভর শক্তি ইত্যাদি।

জীবাশ্ম জ্বালানি 

উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর দেহাবশেষ থেকে উৎপন্ন জ্বালানিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে। 

জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপত্তি 

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে মাটির নিচে উদ্ভিদ ও প্রাণী চাপা পড়ে। এর পরে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সেগুলি ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তর এর চাপ, তাপ এবং ব্যাকটেরিয়া দ্বারা পচনের ফলে ক্রমাগত রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন হয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিণত হয়। 

জ্বালানির তাপন মূল্য 

কোন জ্বালানির একক ভর বা আয়তনের গ্যাসীয় সম্পূর্ণ দহনে যে পরিমাণ তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তাকে ঐ জ্বালানির তাপন মূল্য বা (Calorific Value) বলে।

এর একক ক্যালোরি/গ্রাম (cal/g) বা কিলোক্যালোরি/ঘনমিটার (kcal/m3) বা কিলোজুল/কেজি (kJ/kg)।

কয়েকটি জ্বালানির তাপন মূল্যের ক্রম হল 
কাঠ < কয়লা < পেট্রোল ~ ডিজেল ~ কেরোসিন > LPG < তরল হাইড্রোজেন (H2)।
জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা 
 
1) জীবাশ্ম জ্বালানির মজুত সীমিত এবং এটি নবীকরণ যোগ্য নয়। 
2) ব্যাপকহারে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করলে এর মজুত একসময় শেষ হয়ে যাবে, এর ফলে শক্তি সংকটের সৃষ্টি হবে । 
3) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারে উৎপন্ন গ্রিন হাউজ গ্যাস বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায় । 
4) আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে কিছু পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি অবশ্যই সঞ্চয় করে রাখতে হবে যাতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস সন্ধানে সময়টুকু পায়।
 
স্থিতিশীল উন্নয়নের ধারণা 
 
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রাকৃতিক সম্পদকে সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ না করে যখন মানব জাতির উন্নয়নের কাজে সুনিয়ন্ত্রিত উপায়ে সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার করা হয়, তখন তাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে।
 
অচিরাচরিত শক্তি বা অপ্রচলিত শক্তি:  
অনবীকরণ যোগ্য জীবাশ্ম জ্বালানীর বিকল্প হিসেবে যে সকল নবীকরণ যোগ্য শক্তি সম্পদ দৈনন্দিন প্রয়োজনে অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহৃত হয় তাদের অপ্রচলিত বা অচিরাচরিত শক্তি বলে।
নবীকরণ যোগ্য শক্তির বৈশিষ্ট্য 
এই শক্তিগুলি ১) সহজলভ্য ২) নিঃশেষিত হবার সম্ভাবনা কম ৩) বারবার ব্যবহার করা যায় ৪) পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করে না।
অপ্রচলিত শক্তির উৎস সমূহ  
১) সৌরশক্তি ২) বায়ুশক্তি ৩) জোয়ার ভাঁটা শক্তি ৪) ভূতাপ শক্তি ৫) বায়োমাস শক্তি বা জৈব ভর শক্তি ৬) বায়োগ্যাস।
 
সৌরকোশ এবং এর ব্যবহার 
সৌরকোশ (Solar cell) বা আলোক ভোল্টিয় কোশ (Photo-Voltaic cell) এর সাহায্যে সৌরশক্তি সরাসরি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। 
সাধারণত সৌরকোশে অবিশুদ্ধ অর্ধপরিবাহীর সিলিকন বা গ্যালিয়াম ব্যবহার করা হয়।
আপতিত সৌর শক্তির মাত্র 10% - 15% তড়িৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাই একটি সৌর কোশে খুব সামান্য পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় (প্রায় 0.5 V)
কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য বহুসংখ্যক সৌরকোশ কে একটি বৃহৎ আকারের তলের উপর পাশাপাশি রেখে এক সঙ্গে যুক্ত করা হয় এই ব্যবস্থাকে সোলার প্যানেল (solar panel) বা সোলার মডিউল (solar module) বলে।
সৌরকোশের ব্যবহারঃ 
1) সৌরকোশের সাহায্যে কৃত্রিম উপগ্রহ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। 
2) সৌরকোশকে কাজে লাগিয়ে দূষণ ছাড়াই কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। 
3) ঘড়ি, ক্যালকুলেটার, ট্রাফিক সিগন্যাল, খেলনা ইত্যাদি চালাতে সৌরকোষ ব্যবহার করা হয়। 
4) সৌরশক্তি থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ রান্নার কাজে, ছোট পাম্প, রেডিও-টেলিভিশন ইত্যাদি চালাতে কাজে লাগানো হয়।
 
বায়োমাস শক্তি: উদ্ভিদের মৃত অংশ এবং প্রাণী দেহ নিঃসৃত জৈব বর্য্য পদার্থকে বায়োমাস বলে। বায়োমাকে বায়োফুয়েলের রূপান্তরিত করে বা সরাসরি পুড়িয়ে পাওয়া শক্তিকে বলা হয় বায়োমাস শক্তি।

কয়লা খনির মিথেন 
খনিজ কয়লার কঠিন স্তরের মধ্যে অধিশোষিত অবস্থায় যে মিথেন গ্যাস থাকে তাকে কয়লা খনির মিথেন গ্যাস বা Coal Bed Methane (CBM) বলা হয়। এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি রূপ।
কয়লা উত্তোলন করার আগে কয়লা খনিতে কয়লা স্তরের মধ্যে আটকে থাকা যে মিথেন গ্যাস সংগ্রহ করা হয় তাকে কয়লা খনির মিথেন গ্যাস বা Coal Bed Methane (CBM) বা কোল সিম গ্যাস (CSG) বলা হয়।
এতে বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড  গ্যাস (H2S) না থাকার জন্য এটি মিষ্টি গ্যাস (Sweet gas) নামেও পরিচিত।
উপাদান : এর প্রধান উপাদান মিথেন গ্যাস। এছাড়াও সামান্য পরিমাণে ইথেন, প্রোপেন, বিউটেন নাইট্রোজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাস থাকে। 
 
মিথেন হাইড্রেটঃ জলের অনু দ্বারা সৃষ্ট খাঁচার মতো গঠনে নিম্ন উষ্ণতা ও উচ্চচাপে আবদ্ধ মিথেনকে মিথেন হাইড্রেট বলা হয়। 
এরমধ্যে মিথেন এর ঘনত্ব খুব বেশি হয় তাই  এটি জ্বললে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এই কারণে মিথেন হাইড্রেট কে আগুনে বরফ বা ফায়ার আইস (Fire ice) বলা হয়। এছাড়াও এটিকে হাইড্রোমিথেন (Hydromethane), মিথেন ক্ল্যাথরেট (Methane Clathrate), মিথেন বরফ (Methane ice) ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।
মিথেন হাইড্রেট এর সংকেত হলো 4CH4,23H2O  । 
STP তে 1 লিটার কঠিন মিথেন হাইড্রেট থেকে প্রায় 160 - 170 লিটার মিথেন গ্যাস নির্গত হয়।


আরও পড়ুন
মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান সাজেশনClick Here
[ছায়া] ভৌত বিজ্ঞান [দশম শ্রেণি] - গ্যাসের আচরণ - অনুশীলনীর সমাধানClick Here
[সাঁতরা] ভৌত বিজ্ঞান [দশম শ্রেণি] - গ্যাসের আচরণ - অনুশীলনীর সমাধানClick Here
[প্রান্তিক] ভৌত বিজ্ঞান [দশম শ্রেণি] - গ্যাসের আচরণ - অনুশীলনীর সমাধানClick Here
দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান রাসায়নিক গণনা QUIZ (part 1) Click Here


Tags: দশম শ্রেণী, ভৌত বিজ্ঞান, পরিবেশের জন্য ভাবনা, M.C.Q প্রশ্নোত্তর, দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান পরিবেশের জন্য ভাবনা M.C.Q প্রশ্নোত্তর, WBBSE, class 10, physical science, concern about our environment, WBBSE Class 10 Physical Science Concern About Our Environment M.C.Q questions and answers.
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো । 
                                                                                                                                                                                      

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ