দশম শ্রেণী ভৌত বিজ্ঞান আলো নোটস
WBBSE Class 10 Physical Science Light Notes.
আজ আমরা WBBSE দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞানের আলো (পঞ্চম অধ্যায়) সম্পর্কে আলোচনা করব। আশা করি মাধ্যমিকের সকল ছাত্র ছাত্রীদের খুবই কাজে আসবে। এবার পশ্চিমবঙ্গ দশম শ্রেণীর ভৌত বিজ্ঞান পরীক্ষায় এই topic টি পরীক্ষার জন্য খুব ইম্পর্টেন্ট।
Today we will discuss WBBSE class 10 physical science 5th chapter Light. I hope all the secondary students will be very useful. This time this topic is very important for the WBBSE 10th class physics exam.
👉 গোলীয় দর্পণে আলোর প্রতিফলন (Reflection of light on spherical mirrors): |
![]() |
অবতল দর্পণের ফোকাস |
`PQ` আলােকরশ্মি দর্পণের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে এসে `Q` বিন্দুতে আপতিত হয়েছে এবং প্রতিফলনের পর ফোকাস `F`-এর মধ্য দিয়ে `QR` পথে গিয়েছে। `Q` ও `C` বিন্দু যোগ করা হল। `CQ` রেখাটি হল দর্পণের বক্রতা ব্যাসার্ধ এবং `Q` বিন্দুতে অভিলম্ব।
![]() |
অবতল দর্পণের ক্ষেত্রে ফোকাস দূরত্ব ও বক্রতা ব্যাসার্ধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় |
প্রতিফলনের নিয়ম অনুসারে, আপতন কোণ = প্রতিফলন কোণ।
ஃ ∠PQC = ∠CQF ------ (1)
যেহেতু `PQ` ∥ `CO` এবং `QC` ভেদক সেহেতু ∠PQC = ∠QCF (একান্তর কোণ) ------ (2)
(1) ও (2) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই --- ∠CQF = ∠QCF
ஃ △FQC একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং `FQ` = `FC`
`PQ` উপাক্ষীয় রশ্মি বলে `Q` এবং `O` বিন্দু খুব কাছাকাছি থাকবে এবং সেক্ষেত্রে `FQ` = `OF` ধরা যায়।
ஃ `OF = FC` অর্থাৎ `OF = frac{1}{2} OC` বা, `f = frac{r}{2}` বা `r = 2f`
`PQ` আলােকরশ্মি দর্পণের প্রধান অক্ষের সমান্তরালে এসে `Q` বিন্দুতে আপতিত হয়েছে এবং প্রতিফলনের পর ফোকাস `F` থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় এবং `QR` পথে চলে যায়। `C` ও `Q` যােগ করা হল এবং `N` পর্যন্ত বর্ধিত করা হল। অতএব `CQN` রেখা হল দর্পণের ওপর অভিলম্ব।
![]() |
উত্তল দর্পণের ক্ষেত্রে ফোকাস দূরত্ব ও বক্রতা ব্যাসার্ধের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় |
প্রতিফলনের নিয়ম অনুসারে, আপতন কোণ = প্রতিফলন কোণ।
ஃ ∠PQN = ∠RQN = ∠CQF (বিপ্রতীপ কোণ) ........ (1)
যেহেতু `PQ` ∥ `CO` এবং QC ভেদক সেহেতু ∠PQN = ∠FCQ (অনুরুপ কোণ) ------ (2)
(1) ও (2) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই --- ∠CQF = ∠FQC
ஃ △FQC একটি সমদ্বিবাহু ত্রিভুজ এবং FQ = FC
PQ উপাক্ষীয় রশ্মি বলে Q এবং O বিন্দু খুব কাছাকাছি থাকবে এবং সেক্ষেত্রে FQ = OF ধরা যায়।
ஃ `OF = FC` অর্থাৎ `OF = frac{1}{2} OC` বা, `f = frac{r}{2}` বা `r = 2f`
⭐ গোলীয় দর্পণের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক পদ্ধতিতে বিস্তৃত বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনের নিয়মাবলীঃ
⇒ গোলীয় দর্পণের সাহায্যে কোনো বিস্তৃত বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনের জন্য নিম্নলিখিত তিনটি রশ্মির মধ্যে যেকোনো দুটি রশ্মি অঙ্কন করতে হবে ----
❶ প্রধান অক্ষের সমান্তরাল কোনো রশ্মিঃ এই রশ্মি গোলীয় দর্পণে প্রতিফলিত হওয়ার পর অবতল দর্পণের মুখ্য ফোকাস বিন্দুর মধ্যে দিয়ে যাবে এবং উত্তল দর্পণের মুখ্য ফোকাস থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হবে।
❷ ফোকাস বিন্দুর মধ্যে দিয়ে যাওয়া কোনো রশ্মি ঃ এই রশ্মি প্রতিফলিত হওয়ার পর প্রধান অক্ষের সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলে যাবে।
❸ বক্রতা কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কোনো রশ্মিঃ এই রশ্মি যে পথে আপতিত হয় প্রতিফলনের পর সেই একই পথে ফিরে যাবে। কারণ এই রশ্মি গোলীয় দর্পণের প্রতিফলক তলে লম্বভাবে আপতিত হয়।
⭐ অবতল দর্পণ কর্তৃক বিস্তৃত বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনঃ
1) বস্তুর অবস্থানঃ অসীমে
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
● রশ্মিচিত্রঃ
![]() |
অবতল দর্পণ কর্তৃক বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠন |
⭐
গোলীয় দর্পণের ব্যবহার |
---|
≻ অবতল দর্পণের ব্যবহার |
i) দন্ত চিকিৎসকদের কাজে ব্যবহৃত হয় |
ii) দাড়ি কামানোর দর্পণ হিসেবে ব্যবহৃত হয় |
iii) মোটর গাড়ির হেডলাইটে প্রতিফলক হিসেবে ব্যবহার করা হয় |
≻ উত্তল দর্পণের ব্যবহার |
i) মোটর গাড়ির ভিউফাইন্ডারে ব্যবহৃত হয় |
ii) রাস্তার স্ট্রীট ল্যাম্পে আলোর প্রতিফলক রূপে ব্যবহৃত হয় |
✪ স্পর্শ না করে একটি দর্পণ চেনার পদ্ধতিঃ
⇒ দর্পণ চেনার পদ্ধতিঃ একটি পেন্সিল বা হাতের আঙ্গুল দর্পণের খুব কাছে রাখলে ---
i) যদি বস্তুর সমান আকারের সমশীর্ষ অসদ্ প্রতিবিম্ব দেখা যায় তবে বুঝতে হবে দর্পণ সমতল।
ii) যদি বস্তুর চেয়ে বড় আকারের সমশীর্ষ ও অসদ্ প্রতিবিম্ব দেখা যায় তবে বুঝতে হবে দর্পণটি অবতল।
iii) যদি বস্তুর চেয়ে ছোট সমশীর্ষ ও অসদ্ প্রতিবিম্ব দেখা যায় তবে বুঝতে হবে দর্পণ উত্তল।
👉 আলোর প্রতিসরণ (Refraction of light) |
⭐ আলোর প্রতিসরণঃ আলোক রশ্মি একটি স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মাধ্যমে থেকে ভিন্ন ঘনত্বের অপর একটি স্বচ্ছ ও সমসত্ত্ব মাধ্যমে তীর্যকভাবে প্রবেশ করলে ওই দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে আলোকরশ্মির গতির অভিমুখ পরিবর্তিত হয়। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।
✪ আলোকীয় লঘু মাধ্যমঃ যে মাধ্যমে আলো অপেক্ষাকৃত বেশি গতিবেগে চলে তাকে আলোর সাপেক্ষে লঘু মাধ্যম বলে।
✪ আলোকীয় ঘন মাধ্যমঃ যে মাধ্যমে আলো অপেক্ষাকৃত কম গতিবেগে চলে তাকে আলোর সাপেক্ষে ঘন মাধ্যম বলে।
শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ = `3times10^8` m/s
শূন্য মাধ্যমের সাপেক্ষে অন্য যে কোনো মাধ্যম আলোকীয় ঘন মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয়।
⭐প্রতিসরণের সূত্রাবলীঃ
✪ প্রথম সূত্রঃ আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিসারক তলের উপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
✪ দ্বিতীয় সূত্রঃ দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে আপতন কোণের সাইন এবং প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাত ধ্রুবক হয়।
প্রথম মাধ্যমে আপতন কোণ = `i` এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ = `r` হলে, প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী `frac{sin i}{sin r} = mu` = ধ্রুবক। এই ধ্রুবককে প্রথম মাধ্যমে সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলে।
[এর মান i) মাধ্যমটির প্রকৃতি এবং ii) আপতিত আলোর বর্ণের উপর নির্ভর করে।]
[প্রতিসরণের দ্বিতীয় সূত্রের প্রবক্তা বিজ্ঞানী রবার্ট স্নেলের নাম অনুসারে এই সূত্রটিকে স্নেলের সূত্র বলা হয় ]
✪ আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্কঃ আলোকরশ্মির প্রতিসরণের ক্ষেত্রে প্রথম মাধ্যমে আপতন কোণের সাইন ও দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাতকে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বা আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।
অর্থাৎ প্রথম মাধ্যমে আপতন কোণ = `i` এবং দ্বিতীয় মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ = `r` হলে,
`frac{sin i}{sin r}` = `mu_1^2` [ এখানে `mu_1^2` হল 1 নং মাধ্যম সাপেক্ষে 2 নং মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ]
আমরা জানি আলোর গতিবেগ প্রত্যাবর্তনশীল (reversible) সুতরাং কোনো আলোকরশ্মি 2 নং মাধ্যম থেকে এসে বিভেদতলে r কোণে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর 1 নং মাধ্যমে প্রতিসরণ কোণ হবে i ।
এক্ষেত্রে `frac{sin r}{sin i}` = `mu_2^1` [ এখানে `mu_2^1` হল 2 নং মাধ্যম সাপেক্ষে 1 নং মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ]
সুতরাং `mu_1^2` `times` `mu_2^1` = `frac{sin i}{sin r}` `times` `frac{sin r}{sin i}` = 1
বা, `mu_1^2` = `frac{1}{mu_2^1}`
উদাহরণস্বরূপ বায়ুর সাপেক্ষে জলের প্রতিসরাঙ্ক `frac{4}{3}` হলে জল সাপেক্ষে বায়ুর প্রতিসরাঙ্ক হবে `frac{3}{4}`।
✪ পরম প্রতিসরাঙ্কঃ যখন কোনো আলোক রশ্মি শূন্যস্থান থেকে অন্য কোনো মাধ্যমে প্রতিসৃত হয় তখন আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাতকে ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বলা হয়।
যদি আপতন কোণ = `i` এবং প্রতিসরণ কোণ = `r` হয় তবে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক
`mu` = `frac{sin i}{sin r}`
সুতরাং শূন্য স্থানের সাপেক্ষে কোনো মাধ্যমের আপেক্ষিক প্রতিসরাঙ্ক হলো ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক। স্পষ্টতই শূণ্যস্থানের প্রতিসরাঙ্ক 1 ।
কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলতে সাধারণত বায়ু মাধ্যমের সাপেক্ষে ওই মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বোঝায়। কিন্তু পরীক্ষার সাহায্যে দেখা যায় কোনো মাধ্যমের '' বায়ুর সাপেক্ষে প্রতিসরাঙ্ক '' এবং '' পরম প্রতিসরাঙ্ক '' এই দুই রাশির ব্যবধান খুব কম। তাই বায়ু সাপেক্ষে যে কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক ওই মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বলে ধরা হয়।
উদাহরণস্বরূপ কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5 বলতে বুঝতে হবে বায়ু সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক 1.5।
👉 প্রতিসরণে আলোক রশ্মির কৌণিক চ্যুতি (Angular deviation of a ray of light due to refraction) |
⇒ কৌণিক চ্যুতি ( Angular Deviation): আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে প্রতিসৃত রশ্মি আপতিত রশ্মি অভিমুখে সঙ্গে যে কোণ উৎপন্ন করে তাকে কৌণিক চ্যুতি বলে।
❶ লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণেঃ
![]() |
লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণে কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় |
আলোক রশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে প্রতিসৃত রশ্মি অভিলম্বের দিকে সরে আসে অর্থাৎ আপতন কোণ (i) > প্রতিসরণ কোণ (r) হয়।
প্রতিসৃত রশ্মির কৌণিক চ্যুতি `delta` হলে `delta` + r = i বা, `delta` = i - r
❷ ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণেঃ
![]() |
ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে আলোর প্রতিসরণে কৌণিক চ্যুতি নির্ণয় |
আলোক রশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে প্রতিসৃত রশ্মি অভিলম্ব থেকে দূরে সরে আসে অর্থাৎ প্রতিসরণ কোণ (r) > আপতন কোণ (i) হয়।
প্রতিসৃত রশ্মির কৌণিক চ্যুতি `delta` হলে r - `delta`= i বা, `delta` = r - i
❸ লম্ব আপতনঃ যদি আলোকরশ্মি এক মাধ্যম থেকে অপর এক মাধ্যমের বিভেদতলের উপর লম্বভাবে আপতিত হয়, i = 0° হয়। সেক্ষেত্রে স্নেলের সূত্র অনুযায়ী -----
`mu` sin r = sin i = sin 0° = 0
বা, sin r = 0 [ ஃ `mu` ≠ 0]
বা, r = 0
সুতরাং, দুই মাধ্যমের বিভেদতলে আলোক রশ্মি লম্বভাবে আপতিত হলে তা দিক পরিবর্তন না করে দ্বিতীয় মাধ্যমে চলে যায়। এক্ষেত্রে আলোক রশ্মির চ্যুতি `delta` = 0° ।
✪ লম্ব আপাতন এর ক্ষেত্রে স্নেলের সূত্র প্রযোজ্য নয়ঃ
⇒ যদি আলোক রশ্মি দুই মাধ্যমে লম্বভাবে আপতিত হলে তা দিক পরিবর্তন না করে দ্বিতীয় মাধ্যমে চলে যায়।
ஃ এক্ষেত্রে, i = 0° এবং r = 0°
এখন sin i = sin 0° = 0 এবং sin r = sin 0° = 0
ஃ `mu` = `frac{sin i}{sin r}` = `frac{0}{0}` = যা অর্থহীন।
সুতরাং লম্ব আপাতন এর ক্ষেত্রে স্নেলের সূত্র প্রযোজ্য নয়।
Note that:
(i) লম্ব আপাতন এর ক্ষেত্রে, অর্থাৎ i = 0 হলে r = 0 হয়। তাই `delta`-এর মান সর্বনিম্ন, অর্থাৎ `delta` = 0 হয়।
(ii) i-এর সর্বোচ্চ মানের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ i = 90 হলে `delta`- এর মান সর্বোচ্চ হয়।
⭐ কাঁচের স্ল্যাবের মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মির প্রতিসরণ ( Refraction of light through a rectangular glass slab):

ধরা যাক, `Q` বিন্দুতে আপতন কোণ = `i_1` ও প্রতিসরণ কোণ = `r_1` এবং `R` বিন্দুতে আপতন কোণ = `i_2` ও প্রতিসরণ কোণ = `r_2`।
`Q` বিন্দুতে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে, `mu_a^g` = `frac{sin i_1}{sin r_1}` [ এখানে `mu_a^g` হল বায়ুর সাপেক্ষে কাচের প্রতিসরাঙ্ক ]
`R` বিন্দুতে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে, `mu_g^a` = `frac{sin r_2}{sin i_2}` [ এখানে `mu_g^a` হল কাচের সাপেক্ষে বায়ুর প্রতিসরণাঙ্ক ]
আমরা জানি, `mu_a^g` = `frac{1}{mu_g^a}`
বা, `frac{sin i_1}{sin r_1}` = `frac{sin i_2}{sin r_2}`
আবার, `MN` ∥ `M'N'` এবং `QR` ভেদক সুতরাং `r_1` = `r_2` [ একান্তর কোণ] বা, `sin r_1` = `sin r_2`
ஃ `sin i_1` = `sin i_2` বা, `i_1` = `i_2`
ஃ আপতন কোণ ও নির্গমন কোন পরস্পর সমান হয় অর্থাৎ আপতিত রশ্মি নির্গত রশ্মি পরস্পর সমান্তরাল।
✪ পার্শ্বসরণঃ কাচের স্ল্যাবের মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের ক্ষেত্রে আপতিত রশ্মি ও নির্গত রশ্মি পরস্পর সমান্তরাল হওয়ায় আপতিত রশ্মির সাপেক্ষে নির্গত রশ্মির কৌণিক চ্যুতি শূন্য হয়। কিন্তু প্রতিসৃত রশ্মি পাশের দিকে সরে যায়। আপতিত রশ্মি এবং নির্গত রশ্মির মধ্যবর্তী লম্ব দূরত্ব পার্শ্বসরণ বলা হয়।
Note that:
● আলোকরশ্মির গতিপথে কোনো সমান্তরাল কাচ ফলক থাকলে রশ্মির কোনো চ্যুতি ঘটে না কেবলমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।
●আলোকরশ্মির পার্শ্বসরণের পরিমাণ (i) ফলকের বেধ (ii) আপতন কোণ এবং (iii) ফলকের উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের উপর নির্ভর করে।
👉 প্রিজম সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় সংজ্ঞাঃ
![]() |
Prism |
✪ প্রিজম (Prism): তিনটি আয়তকার এবং দুটি ত্রিভুজাকার তল দ্বারা গঠিত সমসত্ব ও স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে প্রিজম বলে।
✪ প্রতিসারক তল (Refracting surface): আলোকরশ্মি প্রিজমের যে তলে আপতিত হয় এবং প্রতিসরণের পর যে তল থেকে নির্গত হয় সেই তলগুলিকে প্রিজমের প্রতিসারক তল বলে।
✪ প্রান্তরেখা (Edge): প্রিজমের প্রতিসারক তল দুটি যে সরলরেখায় মিলিত হয় তাকে প্রিজমের প্রান্তরেখা বলা হয়।
✪ প্রতিসারক কোণ (Refracting angle): প্রিজমের প্রতিসারক তল দুটি যেকোণে আনত থাকে সেই কোণকে প্রিজমের প্রতিসারক কোণ বা সংক্ষেপে প্রিজমের কোণ বলা হয়।
✪ প্রধান ছেদ (Principal section): যে তল প্রিজমের প্রতিসারক তলকে লম্বভাবে ছেদ করে তাকে প্রিজমের প্রধান ছেদ বলে।
✪ ভূমি (Base): যেকোনো প্রান্তরেখার বিপরীত তলকে প্রিজমের ভূমি বলে।
সাধারণত প্রতিসারক তল দুটি ছাড়া অন্য তিনটি তল ঘষা থাকে।
⭐ প্রিজমের প্রধান ছেদ বরাবর আলোর প্রতিসরণ ( Refraction of light through a prism):
![]() |
প্রিজমের প্রধান ছেদ বরাবর আলোর প্রতিসরণ |
ধরা যাক ABC একটি প্রিজমের প্রধান ছেদ। AB ও AC প্রতিসারক তল এবং BC ভূমি। PQ রশ্মি AB তলের Q বিন্দুতে আপতিত হয়েছে। Q বিন্দুতে প্রতিসরণের সময় আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে প্রবেশ করে, ফলে অভিলম্ব NO-এর দিকে সরে আসে। QR হল প্রতিসৃত রশ্মি।
QR রশ্মি প্রিজমের AC তলের R বিন্দুতে আপতিত হয়। R বিন্দুতে প্রতিসরণের সময় আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করে, ফলে অভিলম্ব N'O থেকে দূরে সরে যায়। RS হল নির্গত রশ্মি।
দেখা যাচ্ছে লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যম প্রিজমের উপর আলোকরশ্মি আপতিত হলে প্রতিসরণের পর রশ্মি প্রিজমের ভূমির দিকে বেঁকে যায়। আবার পারিপার্শ্বিক মাধ্যমের তুলনায় প্রিজমের মাধ্যম লঘু হলে রশ্মির চ্যুতি উল্টো হয় অর্থাৎ ভূমির দিকে না বেঁকে শীর্ষের দিকে বেঁকে যায়।
যদি প্রিজম না থাকতো তবে PQ আলোকরশ্মি QTE পথে যেত, কিন্তু প্রিজম থাকার ফলে আলোকরশ্মি TRS পথে গেছে। আপতিত রশ্মি PQ এবং নির্গত রশ্মি ST-এর অন্তর্ভুক্ত কোণকে চ্যুতিকোণ (angle of deviation) বলা হয়।
✪ প্রিজমের মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মির প্রতিসরণের ক্ষেত্রে চ্যুতি কোণের রাশিমালা নির্ণয় ( Derivation of the angle of deviation in the case of refraction of light through a prism):
⇒
![]() |
প্রিজমের প্রধান ছেদ বরাবর আলোর প্রতিসরণ |
মনে করি ABC একটি প্রিজমের প্রধান ছেদ এবং প্রিজমের প্রতিসরণ প্রতিসারক কোণ ∠ABC = A।
PQRS হল প্রিজমের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণে আলোর গতিপথ।
AB তলে আপতন কোণ ∠PQN = `i_1` ও প্রতিসরণ কোণ ∠RQO = `r_1` এবং
AC তলে আপতন কোণ ∠QRO = `r_2` ও প্রতিসরণ কোণ ∠SRN' = `i_2`
এখন △QTR থেকে পাওয়া যায়,
চ্যুতিকোণ `delta` = ∠TQR + ∠TRQ
= (`i_1` - `r_1`) + ( `i_2` - `r_2`)
= `i_1` + `i_2` - (`r_1` + `r_2`) --------(1)
এখন চতুর্ভুজ AQOR-এর A + ∠AQO + ∠QOR + ∠ARO = 360°
কিন্তু ∠AQO = ∠ARO = 90° [কারণ OQ ও OR প্রতিসারক তলে অভিলম্ব]
ஃ A + 90° + ∠QOR + 90° = 360°
বা, A + ∠QOR = 180° ----------(2)
আবার, △QRO -এর `r_1` + `r_2` + ∠QOR = 180° -----------(3)
(2) ও (3) নং সমীকরণ তুলনা করে পাই ----
`r_1` + `r_2` = A --------------(4)
(4) ও (1) নং সমীকরণ থেকে পাই ----
`delta` = `i_1` + `i_2` - A
✪ চ্যুতিকোণ (Angle of deviation): যেকোনো প্রিজমের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ আপতন কোণ আছে যে কোণর জন্য চ্যুতিকোণ সর্বনিম্ন হয়। এই সর্বনিম্ন চ্যুতিকোণকে প্রিজমের ন্যূনতম চ্যুতিকোণ বলা হয়।
● ন্যূনতম চ্যুতির শর্ত হল --- `i_1` = `i_2`
সুতরাং প্রিজমের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের ক্ষেত্রে আপতন কোণ এবং নির্গমন যখন সময় হয় তখন চ্যুতিকোণ এর মান সর্বনিম্ন হয়।
👉 লেন্স (Lens) |
✪ সংজ্ঞা (Defination): দুটি গোলীয় তল অথবা একটি গোলীয় তল এবং একটি সমতল দ্বারা সীমাবদ্ধ স্বচ্ছ প্রতিসারক মাধ্যমকে লেন্স বলা হয়।
লেন্স প্রধানত দুই প্রকারের-- ১) উত্তল লেন্স ২) অবতল লেন্স
✪ উত্তল লেন্স (Convex lens): যে লেন্সের মাঝখানটা মোটা এবং প্রান্তের দিকে ক্রমশ সরু তাকে উত্তল লেন্স বলে। এই লেন্সের অপর নাম অভিসারী লেন্স।
✪ অবতল লেন্স (Concave lens): যে লেন্সের মাঝখানটা সরু এবং প্রান্তের দিকে ক্রমশ মোটা তাকে অবতল লেন্স বলে। এই লেন্সের অপর নাম অপসারী লেন্স।
⭐ লেন্স সম্পর্কিত কয়েকটি সংজ্ঞাঃ
✪ বক্রতা কেন্দ্র (Centre of Curvature): লেন্সের কোন গোলীয় তল যে গোলকের অংশ, সেই গোলকের কেন্দ্রকে ওই তলের বক্রতা কেন্দ্র বলে।
দুটি গোলীয় তল বিশিষ্ট লেন্সের দুটি বক্রতা কেন্দ্র থাকে।
✪ বক্রতা ব্যাসার্ধ ( Radius of Curvature): লেন্সের কোন গোলীয় তল যে গোলকের অংশ, সেই গোলকের ব্যাসার্ধকে ওই তলের বক্রতা ব্যাসার্ধ বলে।
✪ প্রধান অক্ষ (Principal axis): কোনো লেন্সের দুটি বক্রতা কেন্দ্রগামী কাল্পনিক সরলরেখাকে ওই লেন্সের প্রধান অক্ষ বলে।
✪ সরু বা পাতলা লেন্স ( Thin lens): কোনো লেন্সের বেধ যদি তার দুই পৃষ্ঠের বক্রতা ব্যাসার্ধের তুলনায় খুব ছোট হয় তবে ওই লেন্সকে সরু বা পাতলা লেন্স বলা হয়।
✪ আলোক কেন্দ্র (Optical Centre): কোনো লেন্সের একটি তলে আপতিত আলোকরশ্মি প্রতিসরণের পর লেন্সের অপর তল থেকে আপতিত রশ্মির সমান্তরালভাবে নির্গত হলে লেন্সের ভিতর ওই রশ্মির গতিপথ প্রধান অক্ষকে যে বিন্দুতে ছেদ করে তাকে ওই লেন্সের আলোক কেন্দ্র বলে।
✪ পাতলা লেন্সের আলোক কেন্দ্র ( Optical Centre of thin lens): সরু বা পাতলা লেন্সের আলোক কেন্দ্র হল লেন্সের প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত এমন একটি বিন্দু, যে বিন্দুর মধ্যে দিয়ে আলোকরশ্মি গেলে তার কোনো চ্যুতি বা পার্শ্বসরণ হয় না।
👉 মুখ্য ফোকাস বা ফোকাস (Principal Focus or Focus): সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রধান অক্ষের সমান্তরালে কোন লেন্সে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের ওপর যে নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় ( উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে) বা যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে) তাকে ওই লেন্সের মুখ্য ফোকাস বা ফোকাস বলা হয়।
গোলীয় দর্পণের কেবলমাত্র একটি ফোকাস থাকে কিন্তু লেন্সের ফোকাস দুটি তার কারণ গোলীয় দর্পণের প্রতিফলক তল একটি কিন্তু লেন্সের প্রতিসারক তল দুটি।
👉 প্রথম মুখ্য ফোকাসঃ
❶ উত্তল লেন্সের প্রথম মুখ্য ফোকাস (First principal focus of convex lens): প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত যে বিন্দু থেকে নির্গত অপসারী রশ্মিগুচ্ছ উত্তল লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল ভাবে নির্গত হয় সেই বিন্দুকে উত্তল লেন্সের প্রথম মুখ্য ফোকাস বলা হয়।
❷ অবতল লেন্সের প্রথম মুখ্য ফোকাস (First principal focus of concave lens): প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত যে বিন্দুগামী অভিসারী রশ্মিগুচ্ছ অবতল লেন্সে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের সমান্তরাল ভাবে নির্গত হয় সেই বিন্দুকে অবতল লেন্সের প্রথম মুখ্য ফোকাস বলে।
👉 দ্বিতীয় মুখ্য ফোকাসঃ
❶ উত্তল লেন্সের দ্বিতীয় মুখ্য ফোকাস (Second principal focus of convex lens): সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রধান অক্ষের সমান্তরালে এসে কোনো উত্তল লেন্সে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর যে নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয় তাকে উত্তল লেন্সের দ্বিতীয় মুখ্য ফোকাস বলা হয়।
❷ অবতল লেন্সের দ্বিতীয় মুখ্য ফোকাস (Second principal focus of concave lens): সমান্তরাল আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রধান অক্ষের সমান্তরালে এসে কোনো অবতল লেন্সে আপতিত হলে প্রতিসরণের পর প্রধান অক্ষের উপর অবস্থিত যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয়, তাকে ওই অবতল লেন্সের দ্বিতীয় মুখ্য ফোকাস বলে।
👉উত্তল লেন্সের অবতল লেন্সের মতো এবং অবতল লেন্সের উত্তল লেন্সের মত আচরণঃ লেন্সের উপাদানের প্রতিসরাঙ্কের থেকে বেশি প্রতিসরাঙ্ক যুক্ত কোনো মাধ্যমে লেন্সকে রাখলে ওই লেন্সের আচরণ উল্টে যায়। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে উত্তল লেন্স অবতল লেন্সের মতো এবং অবতল লেন্স উত্তল লেন্সের মতো আচরণ করে।
👉 লেন্স দ্বারা প্রতিবিম্ব গঠনের ক্ষেত্রে রশ্মি অনুসরণ পদ্ধতি:
❶ প্রধান অক্ষের সমান্তরাল ভাবে আপতিত রশ্মি প্রতিসরণের পর মুখ্য ফোকাস দিয়ে যায় (উত্তল লেন্সের ক্ষেত্রে) বা মুখ্য ফোকাস থেকে অপসৃত হচ্ছে বলে মনে হয় (অবতল লেন্সের ক্ষেত্রে) ।
❷ আলোক রশ্মি উত্তল লেন্সের মুখ্য ফোকাস দিয়ে গেলে অথবা অবতল লেন্সের মুখ্য ফোকাস এর দিকে অগ্রসর হলে প্রতিসরণের পরে তা প্রধান অক্ষের সঙ্গে সমান্তরালভাবে নির্গত হবে।
❸ কোনো রশ্মি উত্তল ও অবতল লেন্সের আলোক কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে গেলে তার কোনো বিচ্যুতি ঘটবে না, সোজাসুজি একই পথে চলবে ।
👉 উত্তল লেন্স দ্বারা বিস্তৃত বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনঃ
1) বস্তুর অবস্থানঃ অসীমে
● রশ্মিচিত্রঃ
● প্রতিবিম্বের অবস্থানঃ মুখ্য ফোকাসে (F) বা ফোকাস তলে।
● প্রতিবিম্বের প্রকৃতি ও আকৃতিঃ সদ্, অবশীর্ষ এবং অতি ক্ষুদ্র।
● ব্যবহারঃ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অভিলক্ষ্য তৈরিতে।
2) বস্তুর অবস্থানঃ 2f-এর বেশি দূরে
● প্রতিবিম্বের অবস্থানঃ লেন্সের অপর পাশে f ও 2f এর মধ্যে।
● প্রতিবিম্বের প্রকৃতি ও আকৃতিঃ সদ্, অবশীর্ষ এবং ক্ষুদ্রতর।
● ব্যবহারঃ ক্যামেরায় উত্তল লেন্সের এই ধর্ম কাজে লাগানো হয়।
3) বস্তুর অবস্থানঃ লেন্স থেকে 2f দূরে।
|
● প্রতিবিম্বের প্রকৃতি ও আকৃতিঃ সদ্, অবশীর্ষ এবং বস্তুর আকারের সমান।
4) বস্তুর অবস্থানঃ লেন্সের থেকে f ও 2f দূরত্বের মধ্যে।
● রশ্মিচিত্রঃ
5) বস্তুর অবস্থানঃ ফোকাসে (F-তে)।
● রশ্মিচিত্রঃ
● প্রতিবিম্বের অবস্থানঃ অসীমে।
● প্রতিবিম্বের প্রকৃতি ও আকৃতিঃ সদ্, অবশীর্ষ এবং অতিমাত্রায় বিবর্ধিত।
● ব্যবহারঃ বর্ণালিবীক্ষণ যন্ত্রের উত্তল লেন্সের এই ধর্ম কাজে লাগানো হয়।
6) বস্তুর অবস্থানঃ আলোককেন্দ্র ও ফোকাসের মধ্যে।
● রশ্মিচিত্রঃ
● ব্যবহারঃ বর্ণালিবীক্ষণ বিবর্ধক কাচ হিসেবে, অণুবীক্ষণ ও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের অভিনেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
👉 অবতল লেন্স দ্বারা বস্তুর প্রতিবিম্ব গঠনঃ
⇒ বস্তুর অবস্থান যেখানেই হোক না কেন অবতল লেন্স দ্বারা সৃষ্ট প্রতিবিম্বের প্রকৃতি ও বিবর্ধন সর্বদা একই রকমের হয়।
লক্ষ্যবস্তু লেন্সের যেদিকে থাকে প্রতিবিম্ব সেদিকেই গঠিত হয়। প্রতিবিম্ব অসদ্, সমশীর্ষ ও খর্বাকার হয়। এর অবস্থান সর্বদা লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে হয়।
👉লেন্স চেনার পদ্ধতিঃ কোনো লেন্সের খুব কাছে একটি আঙুল রেখে অপর পাশ থেকে দেখতে হবে।
❶ যদি প্রতিবিম্বটি অসদ্, সমশীর্ষ এবং বস্তুর আকারের তুলনায় বড়ো হয় তবে বুঝতে হবে লেন্সটি উত্তল।
❷ যদি প্রতিবিম্বটি অসদ্, সমশীর্ষ ও আকারে বস্তুর
তুলনায় ছোট হয় তবে লেন্সটি অবতল লেন্স।
✪ রৈখিক বিবর্ধনঃ প্রতিবিম্বের দৈর্ঘ্য বা উচ্চতা এবং বস্তুর দৈর্ঘ্য বা উচ্চতার অনুপাতকে রৈখিক বিবর্ধন বলে। একে m চিহ্ন দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
প্রমাণ করা যায় যে রৈখিক বিবর্ধন প্রতিবিম্ব দূরত্ব ও বস্তু দূরত্বের অনুপাত।
অর্থাৎ রৈখিক বিবর্ধন,
👉 বিবর্ধক কাচ (Magnifying glass):
কোনো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে বস্তু রাখলে বস্তুটির অসদ্, সমশীর্ষ এবং বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। অর্থাৎ বস্তুটিকে বড়ো দেখায়। এই কারণে উত্তল লেন্সকে বিবর্ধক কাচ বলে।
✪ কোনো উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্বের মধ্যে বস্তু রাখলে বস্তুটির অসদ্, সমশীর্ষ এবং বিবর্ধিত প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। উত্তল লেন্সের ফোকাস দূরত্ব যত কম হবে প্রতিবিম্বের বিবর্ধনও তত বেশি হয়। উত্তল লেন্সের এই ধর্মকে বিবর্ধক কাচে কাজে লাগানো হয়। অর্থাৎ বলা যায় বিবর্ধক কাচ হল কম ফোকাস দৈর্ঘ্যের উত্তল লেন্স।
👉 মানুষের চোখের সমস্যা (Defects of human eye):
✪ চক্ষুর উপযোজন (Accommodation
of eye): চক্ষু লেন্সের ফোকাস দূরত্বের পরিবর্তন ঘটিয়ে বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত বস্তুর প্রতিবিম্বকে রেটিনায় গঠন করার ক্ষমতাকে চোখের উপযোজন বলে।
✪ চক্ষুর অভিযোজন (Adaption of
eye): চোখের মণি প্রয়োজনমতো ছোটো বড়ো করে চোখের সহ্য ক্ষমতা অনুযায়ী আলো প্রবেশ
করানোর ক্ষমতাকে চক্ষুর অভিযোজন বলে।
✪ নিকট বিন্দু (Near point): বিনা কষ্টে চোখ সর্বপেক্ষা কাছের যে বিন্দুতে অবস্থিত কোনো বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে চোখের নিকট বিন্দু বলে। সুস্থ চোখের ক্ষেত্রে নিকট বিন্দু প্রায় চোখ থেকে 25 cm দূরে অবস্থিত। এই দূরত্বকে স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব (least distance of distinct vision) বলে।
✪ দূর বিন্দু (Far point): বিনা কষ্টে চোখ সর্বপেক্ষা দূরের যে বিন্দুতে অবস্থিত কোনো বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পায় তাকে চোখের দূর বিন্দু বলে। সুস্থ চোখের দূর বিন্দু চোখ থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থিত বলে ধরে নেওয়া হয়।
✪ দৃষ্টি পাল্লা (Visual range): নিকট বিন্দু থেকে দূর বিন্দু পর্যন্ত দূরত্বকে চোখের দৃষ্টির পাল্লা বলে।
⭐ দীর্ঘদৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়া (Long sight or
Hypermetropia): চোখের যে ত্রুটির জন্য চোখ দূরের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় কিন্তু কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না তাকে দীর্ঘদৃষ্টি বা হাইপারমেট্রোপিয়া বলে।
✪ দীর্ঘদৃষ্টির কারণঃ ❶ চোখের নিকট বিন্দুর দূরত্ব 25 cm তুলনায় বেশি হয়ে গেলে,
❷ অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে ছোটো হয়ে গেলে,
❸ অক্ষিলেন্সের ফোকাস দূরত্ব কোনো কারণে বেড়ে গেলে।
✪ প্রতিকারঃ উপযুক্ত ফোকাস দূরত্বের উত্তল লেন্স চোখের সামনে ব্যবহার করে এই ত্রুটি দূর করা হয়।
⭐ হ্রস্বদৃষ্টি বা মায়োপিয়া (Short
sight or myopia): চোখের যে ত্রুটির জন্য চোখ কাছের বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পায় কিন্তু দূরের বস্তুকে স্পষ্ট দেখতে পায় না তাকে হ্রস্বদৃষ্টি বা মায়োপিয়া বলে।
✪ হ্রস্বদৃষ্টির কারণঃ চোখের দূর বিন্দু অসীম থেকে চোখের কাছে সরে এলে,
❷ অক্ষিগোলকের আকার স্বাভাবিকের চেয়ে বড়ো হয়ে গেলে,
❸ অক্ষিলেন্সের ফোকাস দূরত্ব কোনো কারণে কমে গেলে।
✪ প্রতিকারঃ উপযুক্ত ফোকাস দূরত্বের অবতল লেন্স চোখের সামনে ব্যবহার করে এই ত্রুটি দূর করা হয়।
👉 আলোর বিচ্ছুরণ (Dispersion of light): সাদা আলো বা অন্য কোনো বহুবর্ণী আলো প্রিজম বা প্রিজমের মত কোনো প্রতিসারক মাধ্যমে প্রতিসৃত হলে তার উপাদান বর্ণগুলিত বিশ্লিষ্ট হয়। এই ঘটনাকে আলোর বিচ্ছুরণ বলে।
👉 স্নেলের সূত্রের সাহায্যে আলোর বিচ্ছুরণের ব্যাখ্যা (Explanation of dispersion of light with the help of
Snell's law):
⇒ স্নেলের সূত্র অনুযায়ী কোনো মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক,
`mu = frac {sin i} {sin r} `
যেখানে, `i` = আপতন কোণ ও `r` = প্রতিসরণ কোণ।
এখন, নির্দিষ্ট আপতন কোণের জন্য,
`mu prop frac {1} {sin r} ` ------ (1)
আবার, উল্লিখিত মাধ্যমে আলোর বেগ `v` হলে,
`mu prop frac{1}{v} ` ------ (2)
(1) ও (2) নং সমীকরণ থেকে বলা যায়,
`sin r prop v`
অর্থাৎ প্রতিসরণ কোণ আলোকরশ্মির বেগের সমানুপাতিক ।
আমরা জানি শূন্য মাধ্যম বা বায়ু মাধ্যম ছাড়া অন্য কোনো আলোকীয় মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণের আলোর বেগ বিভিন্ন। তাই বিভিন্ন বর্ণের আলোকরশ্মির প্রতিসরণ কোণ বিভিন্ন হয় এবং সেগুলি পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে পড়ে। তাই সাদা আলো বা বহুবর্ণী আলোর বিচ্ছুরণ হয়।
✪ কাচের স্লাবে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে নাঃ যে কোনো প্রতিসারক মাধ্যমেই সাদা আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। যদি সাদা আলোকরশ্মি কাচের স্ল্যাবের একটি তলে তীর্যকভাবে এসে পড়লে ওই তলে বিভিন্ন বর্ণের রশ্মির যে পরিমাণ চ্যুতি হয় স্ল্যাবের বিপরীত তল থেকে নির্গত হওয়ার সময় রশ্মিগুলির সমান ও বিপরীত চ্যুতি হয়। এর ফলে বিভিন্ন বর্ণের আলোকরশ্মিগুলি পুনরায় মিশে সাদা আলো গঠন করে। তাই কাচের স্ল্যাব ব্যবহার করে সাদা আলোর বিচ্ছুরণ করা যায় না।
✪ কোনো মাধ্যমে বিভিন্ন বর্ণের আলোর বেগ বিভিন্ন হলেই বিচ্ছুরণ ঘটতে পারে। তাই ওই ধরনের মাধ্যমকে বিচ্ছুরক মাধ্যম বলে। শূন্য মাধ্যমে সকল বর্ণের আলোর একই বেগে চলে বলে, ওই মাধ্যমে যৌগিক আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে না। তাই শূন্য মাধ্যমে বিচ্ছুরক মাধ্যম নয়।
✪ বিচ্ছুরণের প্রাকৃতিক উদাহরণঃ বিচ্ছুরণের প্রাকৃতিক উদাহরণ হল আকাশে রামধনু সৃষ্টি। আকাশে ভাসমান ক্ষুদ্র জলবিন্দুতে সূর্য রশ্মির বিচ্ছুরণ এর মাধ্যমে রামধনু সৃষ্টি হয়।
✪ একবর্ণী আলোকরশ্মিঃ যে আলোকরশ্মি কেবলমাত্র একটি বর্ণ দ্বারা গঠিত তাকে একবর্ণী আলোকরশ্মি বলে।
✪ যেমনঃ সাদা আলোর বিচ্ছুরণ এর ফলে প্রাপ্ত সাতটি বর্ণের আলোর প্রতিটি বর্ণের আলোই হলো একবর্ণী আলোকরশ্মি। তাছাড়া সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প থেকে নির্গত হলুদ বর্ণের আলো হল একবর্ণী আলোক রশ্মি।
✪ বহুবর্ণী আলোকরশ্মিঃ যে আলোকরশ্মি একাধিক বর্ণের আলোর সমন্বয়ে গঠিত তাকে বহুবর্ণী আলোক রশ্মি বলে।
✪ বিভিন্ন বস্তুর বর্ণ বিভিন্ন দেখায় কারণঃ
⇒ কোনো বস্তুর উপর আলো পড়লে আপতিত আলোর কিছু বর্ণ বস্তুটি দ্বারা শোষিত হয় কিছু বর্ণ প্রতিফলিত হয় এবং কিছু বর্ণ প্রতিসৃত হয়। বস্তুর দ্বারা প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত আলো আমাদের চোখে এসে পৌছলে আমরা সেই বস্তুকে দেখতে পাই ।
✪ কোনো বস্তুর বর্ণ নির্ভর করবে ---
❶ কোনো বস্তু থেকে যে বর্ণের আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছায় তার ওপর।
❷ কোনো বস্তু থেকে সব বর্ণের আলো আমাদের চোখ এসে পৌঁছলে আমরা বস্তুটিকে সাদা দেখব।
❸ কোনো বস্তু থেকে কোনো আলোকরশ্মি আমাদের চোখে এসে না পৌঁছলে আমরা বস্তুটিকে কাল দেখব।
✪ সূর্যের আলোয় সবুজ পাতা সবুজ দেখায় কেন?
⇒ কোনো অস্বচ্ছ বস্তু সূর্যালোকে থাকলে ওই বস্তু যে বর্ণের আলোকে প্রতিফলিত করে, বস্তুকে সেই বর্ণের বলে মনে হয়। সবুজ পাতার উপর সূর্যের সাদা আলো পড়লে পাতা কেবল মাত্র সবুজ আলো প্রতিফলিত করে এবং অন্য সব বর্ণের আলোকে শোষণ করে নেয়। ফলে আমাদের চোখে শুধু সবুজ আলো পৌঁছায়। তাই সূর্যের আলোয় সবুজ পাতা সবুজ দেখায়।
✪ লাল আলোতে সবুজ পাতা কেমন দেখাবে?
⇒ সবুজ পাতার উপর লাল আলো পড়লে পাতা তা শোষণ করে নেবে এবং কোনো আলো প্রতিফলন করবে না। ফলে পাতাটিকে কালো দেখাবে।
✪ আলোর বিক্ষেপণঃ কোনো বস্তু কণার উপর তার আকারের তুলনায় বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট কোনো তরঙ্গ এসে পড়লে ওই বস্তুকণা তরঙ্গ থেকে শক্তি শোষণ করে এবং পরে ওই শোষিত শক্তিকে তরঙ্গের আকারে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। এই ঘটনাকে বিক্ষেপণ বলে।
✪ সূর্যের আলো যখন বায়ুমন্ডলের মধ্যে দিয়ে যায় তখন বায়ুমণ্ডলের বায়ুকণা এবং সূক্ষ্ম ধূলিকণা ওই আলো শোষণ করে এবং শোষিত আলোকে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয় এই ঘটনাকে আলোর বিক্ষেপণ বলে।
✪ দিনের বেলায় আকাশকে নীল দেখায়ঃ দিনের বেলায় যখন সূর্য রশ্মি বায়ুমন্ডলের ভিতর দিয়ে আসে তখন বায়ুমণ্ডলের সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও বিভিন্ন গ্যাস অণু দ্বারা সূর্যের আলোর বিক্ষেপণ হয় । বিজ্ঞানী র্যালের সূত্রানুযায়ী বিক্ষিপ্ত আলোর তীব্রতা আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের চতুর্থ ঘাতের ব্যস্তানুপাতিক। এখন সূর্যের সাদা আলোর সাতটি বর্ণের মধ্যে নীল ও বেগুনি বর্ণের আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম। তাই সাদা আলো বিক্ষিপ্ত হওয়ার পর তার
মধ্যে উপস্থিত বেগুনি ও নীল বর্ণের আলোর তীব্রতা সবচেয়ে বেশি হয়। আমাদের চোখ বেগুনি বর্ণ অপেক্ষা নীল বর্ণের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হাওয়ায় আমরা আকাশকে নীল দেখি।
✪ চাঁদের আকাশকে কালো দেখায়ঃ চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই তাই সূর্যের আলোর কোনো বিক্ষেপণ হয় না। তাই চাঁদের আকাশকে কালো দেখায়।
0 মন্তব্যসমূহ
If you have any doubts.Please let me know.
Please do not enter any spam link in the comment box.
Thanks.